কাপ্তাইয়ের পাহাড়ে কফি চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

অর্ণব মল্লিক,
কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই গবেষণা কেন্দ্র পাহাড়ের কৃষিতে নতুন নতুন ফলের জাত উদ্ভাবন করে সফলতা নিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফলের ১৯টি জাত উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় এবার তারা কফির নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মাধ্যমে পাহাড়ের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দ্বার উন্মোচন হয়েছে।

রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছর গবেষণা চালিয়ে অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা নামের দুটি কফির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন এখানকার কৃষিবিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে অ্যারাবিকা জাতের কফিটি বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তবে তাদের উদ্ভাবিত জাতের নাম দেওয়া হয়েছে বারি কফি-১ এবং বারি কফি-২। এ ছাড়া আগামী দুই বছরের পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষাবাদের আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।

গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, নতুন উদ্ভাবনকৃত কফির জাতটির বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলের যেকোনো এলাকায় ছায়াযুক্ত স্থানে এর আবাদ সম্ভব। ফলে এটি বিভিন্ন বাগানে সাথি ফসল হিসেবে চাষ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কফি চাষ শুরু করার তিন থেকে চার বছর পর গাছে ফল আসা শুরু হয়। প্রতিটি গাছ থেকে চার থেকে পাঁচ কেজি কফি ফল পাওয়া সম্ভব। সে হিসেবে বাগানে প্রতি হেক্টরে সাত থেকে আট মেট্রিক টন কফি ফল উৎপাদন সম্ভব হবে। এ ছাড়া কফি সাথি ফসল হওয়ায় আলাদা খরচ কিংবা পরিচর্যার তেমন প্রয়োজন হয় না। কফি চাষ অনেকটা সহজ হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ বাড়ছে বলে তিনি জানান। ইতোমধ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় স্থানীয় অনেক চাষি কফি চাষ শুরু করেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

কফি চাষে জড়িত স্থানীয় কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অনেকটা কম খরচে এবং ঝামেলা ছাড়া কফি চাষ শুরু করা সম্ভব। অল্প সময়ে ফলন ভালো আসে। বিশেষ করে এই কফি চাষ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। যেকোনো বাগানে সাথি ফসল হিসেবে লাগানো যায়। অন্য গাছের ছায়া পেলেই এই কফি চাষের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই চাষিরা আশা করছেন, কফি চাষের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

এদিকে কফির এই নতুন জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নিজাম উদ্দীন জানান, বিশ্বসেরা অ্যারাবিকা জাতের এই কফি যেহেতু আমরা পাহাড়ি এলাকায় আবাদ করে সফলতা পেয়েছি, তাই এটি মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। আমরা আশা করছি আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পাহাড়ের প্রত্যেকটি স্থানে এই কফির আবাদ শুরু করতে পারব। বাংলাদেশে কফির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে কফি একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। তাই পাহাড়ে কফি চাষের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি!